ঢাকা ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

উখিয়ার ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের পত্র 

উখিয়ার ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসকের পত্র 

আদালতে মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) গৃহীত হওয়ায় উখিয়ার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি প্রেরণ করেছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান।

জেলা প্রশাসক কর্তৃক গত ২ আগস্ট ২০২৩ ইংরেজি স্মারক নম্বর- ০৫.২০.২২০০.১২৬.১১,০৩৭,২০২৩-৩৪৩ মূলে মন্ত্রণালয়ে প্রেরিত চিঠিতে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান হোসাইন সজিব এর বরাতে এম গফুর উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালতে গৃহীত চারটি মামলার অভিযোগ পত্রে সার্টিফাইড কপি সংযুক্ত করেন।

এব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, " কোন চেয়ারম্যান ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত হলে আইন অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, উখিয়ার পালংখালীর ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে চারটি মামলায় আদালতে অভিযোগ পত্র গৃহীত হয়েছে। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কতৃক ১৩ জুলাই, ২০২৩ ইংরেজি স্মারক নং-০৫.২০,২২৯৪,০০০,০০৩.৩২.২৩-৫৮৭ মূলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রেরিত তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী বিষয়টি জেলা প্রশাসন স্থানীয় সরকার বিভাগকে লিখিতভাবে জানিয়েছে।

জেলা প্রশাসন কতৃক প্রেরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এম গফুর উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়ের করা চারটি মামলা- এসপিটি ৭৮/২০১৪। জি, আর নং ২৮৮/২০১৩ (উখিয়া)। জি, আর মামলা নং ৭০/২০১৫ (উখিয়া)। দ্রুত বিচার মামলা নং- ২৪/২০১৮ এবং সি. আর মামলা নং- ২৩৫/২০২২ (উখিয়া) এর অভিযোগপত্র আদালত গ্রহণ করেছে।

জানা গেছে, সর্বশেষ গৃহীত হওয়া (২৩৫/২০২২) মামলাটি ৫ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে এম গফুর উদ্দিন চৌধুরীকে প্রধান আসামী করে দায়ের করেন সিরাজুল মোস্তফা নামে এক ব্যক্তি।

স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন ২০০৯ এর ৩৪ (১) ধারা অনুযায়ী অনুযায়ী কোন ইউপি চেয়ারম্যান ফৌজদারি মামলায় আদালত গৃহীত অভিযোগ পত্রের আসামী হলে সাময়িক বরখাস্ত করার বিধান রয়েছে। অভিযুক্ত এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এ মামলার প্রধান স্বাক্ষী, পালংখালী ৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শেখ নুরুল আলম পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করলে এম গফুর উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেন। উক্ত আবেদনের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ইউপি.০১ শাখা, স্থানীয় সরকার বিভাগ এর স্মারক নম্বর-৪৬,০০,০০০০.০১৭.৯৯.০০১.২০২২(অংশ-৫)-২৩৬, তারিখঃ ১৫ মার্চ, ২০২৩ খ্রি: ও ইউপি ০১ শাখা, স্থানীয় সরকার বিভাগ এর স্মারক নম্বর-৪৬.০০.০০০০.০১৭.৯৯.০০১.২০২২ (অংশ-৫)-২৮১, তারিখঃ ৩০ মার্চ, ২০২৩ খ্রি: পৃথক দুই টি চিঠি ইস্যু করে। উক্ত ২ পত্রের প্রেক্ষিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কতৃক ২ আগষ্ট ২০২৩ ইংরেজি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে উক্ত চিঠি প্রেরণ করে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতা জানান, এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বিএনপি সমর্থিত নেতা হওয়ায় তার এলাকার জনগণ দেশের চলমান উন্নয়নের সুফল তেমন পাচ্ছেনা।

টানা তৃতীয় মেয়াদে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা আলোচিত জনপ্রতিনিধি এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী এর আগে দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে সাময়িক বহিষ্কার হয়ে ছিলেন।

সে সময়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব শরীফা আহমেদ স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়ে ছিলো - চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে উখিয়া থানায় দায়েরকৃত জিআর মামলা, স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল মামলা ও উখিয়া থানার অপর এক মামলায় দেয়া অভিযোগপত্র আদালত কর্তৃক গৃহীত হওয়ায় স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এর ধারা ৩৪(১) মোতাবেক তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

পরিপত্রে আরো বলা হয়, চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা বিচারাধীন থাকায় তার দ্বারা কোনো প্রকার ক্ষমতা প্রয়োগ জনস্বার্থের পরিপন্থি। উক্ত পরিপত্র বা বরখাস্ত আদেশ পরে স্থগিত করা হয়ে ছিলো।

এব্যাপারে জানতে চাইলে পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমি ব্যক্তিগত কাজে এখন ঢাকায় অবস্থান করছি, তবে পত্র পাঠানোর বিষয়টি আমি শুনেছি। এটি একটি প্রতিবেদন যেখানে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে, এখানে কোন সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়নি বা সিদ্ধান্তের কথা স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি ।

তিনি আরো বলেন, আমার স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যারা বিগত তিন তিনটি ইউপি নির্বাচনে আমার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দিতা করে বিপুল ভোটে হেরে গিয়েছে, তারা সকলেই এক জোট হয়ে আমার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা দায়ের করে আমাকে রাজনৈতিক হয়রানি করে যাচ্ছে। আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের বেশি ভাগই ইয়াবা ব্যবসায়ী ও পাহাড় খেকো এবং অবৈধ বালু উত্তোলনকারী।

তিনি ক্ষোভের সাথে আরও জানান, ভালো কাজ করলে এখন শক্রুর অভাব হয় না। আমি যেহেতু জনপ্রতিনিধি সেহেতু তাদের এসব অপকর্মের বাধা দেওয়া আমার নৈতিক দায়িত্ব ও তাদের অপকর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন সভা সমাবেশে তুলে ধরে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হয় এবং সরকারী বিভিন্ন দপ্তরকে আমার সহযোগিতা করতে হয়। এসব কারনেই আমার স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আমার উপর ক্ষিপ্ত , তাই তারা একজোট হয়ে আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে পরিষদের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

আমি বিশ্বাস করি জনগণ হয়রানি হয় ও জনগনের স্বার্থহানী হয় এবং সরকারের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হয় এমন কোন সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে নি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাকে অপরাধী বা দোষী বলার সুযোগ নেই। এরপরও সরকার যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে সেটা মেনে নিবো।

আমার সাথে কারো কোন ব্যক্তিগত ঝামেলা নেই। তারপরেও কেন এরা আমার বিরুদ্ধে বারবার এসব মিথ্যা অভিযোগ বা মিথ্যা মামলা করা হয় তা আমার জানা নেই। ভোটের রাজনীতিতে তো প্রতিযোগীতা থাকবেই, প্রতিযোগীতাকে প্রতিহিংসার রাজনীতিতে রুপ দেওয়া কোন সচেতন বা বিবেকবান মানুষের কাজ নয়।

উল্লেখ্য, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার পালং খালী ইউনিয়ন পরিষদের টানা ৩ বারের (প্রত্যক্ষ ভোটে) নির্বাচিত চেয়ারম্যান।

উখিয়া,চেয়ারম্যান,বিরুদ্ধে
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত